بسم الله الرحمن الرحيم
﴿يَأَيهَا الّذينَ أَمَنوا اسْتَجيبوا لِلّهِ وَ لِلرّسولِ إِذا ذَعاكُمْ لِما يُحْييكُمْ﴾
হে মুমিনগণ! রাসূল যখন তোমাদেরকে এমন কিছুর দিকে আহবান করে যা তোমাদেরকে প্রাণবন্ত করে, তখন আল্লাহ ও রাসূলের আহবানে সাড়া দিবে (সূরা আনফাল আয়াত নং ২৪)৷
মানুষের আত্মিক দিকটা যেহেতু তাদেরকে অন্যান্য পশুদের থেকে পৃথক করে সুতরাং তা মানুষের বৃহদাংশ তথা প্রধান অংশকে গঠন করে৷ কেননা, মানুষ আত্মার অধিকারী হওয়ার কারণেই মানুষ হিসাবে আখ্যায়িত হয়েছে এবং এদিকটাই তাকে আল্লাহর নৈকট্যলাভে সাহায্য করে থাকে৷
এ কারণেই আল্লাহর ওয়ালীর হুকুমতে মানুষের অস্তিত্বের এ দিকটিতে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হবে এবং আত্মিক মর্যাদা ও মানবীয় গুনাবলী জীবনের প্রতিটি দিকে প্রাধান্য পাবে৷ আন্তরিকতা, আত্মত্যাগ, সত্যবাদিতা এবং সকল উত্তম গুনাবলী সর্বত্র ছড়িয়ে পড়বে৷
اللهم و صلی علی ولی امرک القائم المومل والعدل المنتظر
হে আল্লাহ আপনার ওয়ালী আমরের উপর দরুদ পাঠ করুন যিনি আদর্শ সংগ্রাম করবেন এবং সবার প্রতীক্ষিত ন্যায়বিচার (মাফাতীহ্ আল জিনান দোয়ায়ে ইফতিতাহ্)৷
হ্যাঁ তিনি ন্যায়বিচারকে তাঁর বিপ্লবের মূলমন্ত্র করেছেন৷ কেননা, ন্যায়বিচার হচেছ মানুষের ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবনের প্রাণ এবং ন্যায়পরায়ণতা ব্যতীত পৃথিবী ও তার অধিবাসীরা প্রাণহীন মানুষ যাদেরকে কেবল জীবিত মনে করা হয়ে থাকে৷
ইমাম কাযিম (আ.) নিম্নলিখিত আয়াতের তাফসীর সম্পর্কে বলেছেন:
﴿اعْلَموا أَنّ اللّهَ يُحْيِ الْأَرْضَ بَعْدَ مَوْتِها قَدْ بَيّنَا لَكُمُ الْأَيَتِ لَعَلّكُمْ تَعْقِلونَ﴾
এ আয়াতের অর্থ এই নয় যে, আল্লাহ জমিনকে পানি দিয়ে জীবিত করেন বরং তিনি এমন ধরনের মহাপুরুষদেরকে (এখানে মহাপূরুষ বলতে ইমাম মাহদী (আ.) ও তাঁর সাথীদেরকে বোঝানো হয়েছে৷ তাফসীরে বোরহান খণ্ড- ৭, পৃ.-৪৪৬) প্রেরণ করেন যারা ন্যায়পরায়ণতাকে জীবিত করেন৷ অতঃপর (সমাজে) ন্যায়বিচার জীবিত হওয়ার মাধ্যমে জমিন জীবিত হয়৷
জমিন জীবিত হওয়া বলতে বোঝানো হয়েছে যে, ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর ন্যায়বিচার হচেছ সর্বজনীন ন্যায়বিচার যা কোন নির্দিষ্ট ব্যক্তি বা স্থানের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়৷
اذا قام قائمنا وضع يده علی رووس العباد فجمع به عقولهم و اکمل به اخلاقهم
যখন আমাদের কায়েম কিয়াম করবেন তখন তাঁর পবিত্র হাতকে মানুষের মাথায় বুলাবেন এবং তাদের বিবেককে একত্রিত করবেন ও তাদের চরিত্রকে পরিপূর্ণ করবেন (বিহারুল আনওয়ার খণ্ড- ৫২, পৃ.-৩৩৬)৷
এই সুন্দর উপমা থেকে বোঝা যায় যে, ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর হুকুমতের মাধ্যমে যা কিনা চারিত্রিক ও আধ্যাত্মিক হুকুমত সেখানে মানুষের বিবেক ও চরিত্রের পূর্ণতার ব্যাবস্থা থাকবে৷ কেননা, যেহেতু মানুষের খারাপ চরিত্র তার খারাপ ও ভণ্ড মানষিকতার ফল, অনুরূপভাবে মানুষের সুন্দর ও আদর্শ চরিত্রও তার সুস্থ মস্তিষ্কের ফল৷
২- মারেফাত ও আখলাকের প্রসার : পবিত্র কোরআন ও আহলে বাইতের শিক্ষাতে মানুষের চারিত্রিক ও আধ্যাত্মিক উন্নতির প্রতি বিশেষভাবে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে৷ কেননা, মানুষের উদ্দেশ্যের পথে অগ্রগতি ও উন্নতির মূলমন্ত্র হচেছ তার উত্তম চরিত্র৷ রাসূল (সা.) নিজেও তাঁর নবুয়্যতের উদ্দেশ্যকে চারিত্রিক গুনাবলীকে পরিপূর্ণতায় পৌঁছানো বুঝিয়েছেন (রাসূল (সা.) বলেছেন: انمابعثتلاتمممکارمالاخلاق নিঃসন্দেহে আমি চারিত্রিক গুনাবলীকে পরিপূর্ণতায় পৌঁছানোর জন্য প্রেরিত হয়েছি৷ মিযানুল হিকমা খণ্ড- ৪, পৃ.-১৫৩০) পবিত্র কোরআনও রাসূল (সা.)-কে সবার জন্য উত্তম আদর্শ হিসাবে আখ্যায়িত করেছে (لقدکانلکمفیرسولاللهاسوةحسنة সূরা আহযাব আয়াত নং ২১) কিন্তু অত্যান্ত দুঃখের সাথে বলতে হয় যে, মানুষ কোরআন ও আহলে বাইত থেকে দূরে সরে গিয়ে নষ্টামির নোংরা জ্বলে হাবুডুবু খাচেছ৷ আর এই চারিত্রিক অবক্ষয়ই ব্যক্তি ও সমাজের পতনের মূল৷
ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর শাসনব্যাবস্থায় যা কিনা ঐশী ও আদর্শ হুকুমত সেখানে চারিত্রিক গুনাবলীর প্রসার সবকিছুর উপর প্রাধান্য পাবে৷
ইমাম বাকের (আ.) বলেছেন:
http://portal.tebyan.net/Portal/Cultcure/Punjabi/Site/www.islamshia-wcom/CategoryID/9262/CaseID/41589/71243.aspxما هدم الدين مثل البدع
কোন কিছুই বিদয়াতের ন্যায় দ্বীনকে ধবংস করে না (বিহারুল আনওয়ার খণ্ড- ৭৮, পৃ.-৯১)৷
এ কারণেই দ্বীনদারদেরকে বিদয়াতকারীদের সাথে লড়তে হবে এবং তাদের ধোকার পর্দা উম্মোচন করতে হবে৷ তাদের অসৎ পথকে মানুষকে দেখিয়ে দিতে হবে এবং এভাবেই জনগণকে গোমরাহি থেকে মুক্তি দেওয়া সম্ভব৷
রাসূল (সা.) বলেছেন: যখন উম্মতের মধ্যে বিদয়াত প্রকাশ পাবে তখন আলেমদের কর্তব্য হচেছ তাদের জ্ঞানের প্রকাশ ঘটানো৷ যদি কেউ এমনটি না করে তাহলে তার উপর আল্লাহর লানত বর্ষিত হবে (মিযানুল হিকমা হাঃ ১৬৪৯)৷
ولا يترک بدعة الا ازالها و لا سنة الا اقامها
তিনি সকল বিদয়াতকে উৎখাত করবেন এবং সকল সুন্নতকে প্রতিষ্ঠিত করবেন (বিহারুল আনওয়ার খণ্ড- ৫৮, হাঃ ১১, পৃ.-১১)৷
(খ)- অর্থনৈতিক কর্মসূচী: একটি সুস্থ সমাজের পরিচয় হচেছ তার সুস্থ অর্থব্যবস্থা৷ যদি দেশের সকল সম্পদকে সঠিকভাবে ব্যবহার করা হয় এবং তা একটি বিশেষ গোষ্ঠির হাতে সীমাবদ্ধ না থাকে বরং সরকার দেশের সকল শ্রেণীর মানুষের উপর দৃষ্টি রাখে ও সবার জন্য সম্পদের এ উৎস থেকে
ولا يترک بدعة الا ازالها و لا سنة الا اقامها
তিনি সকল বিদয়াতকে উৎখাত করবেন এবং সকল সুন্নতকে প্রতিষ্ঠিত করবেন (বিহারুল আনওয়ার খণ্ড- ৫৮, হাঃ ১১, পৃ.-১১)৷
(খ)- অর্থনৈতিক কর্মসূচী: একটি সুস্থ সমাজের পরিচয় হচেছ তার সুস্থ অর্থব্যবস্থা৷ যদি দেশের সকল সম্পদকে সঠিকভাবে ব্যবহার করা হয় এবং তা একটি বিশেষ গোষ্ঠির হাতে সীমাবদ্ধ না থাকে বরং সরকার দেশের সকল শ্রেণীর মানুষের উপর দৃষ্টি রাখে ও সবার জন্য সম্পদের এ উৎস থেকে
ولو قد قائمونا لانزلت السماء قطرها و لاخرجت الارض نبتها
আমাদের কায়েম যখন কিয়াম করবে তখন আকাশ উদারভাবে বৃষ্টি দিবে এবং মাটিও উদারভাবে ফসল দান করবে (বিহারুল আনওয়ার খণ্ড- ১০, পৃ.-১০৪, খিসাল ৬২৬)৷
ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর হুকুমতের সকল সম্পদ ইমামের হাতে থাকবে এবং তিনি তা দিয়ে একটি সুষ্ট অর্থব্যবস্থা গড়ে তুলবেন৷
ইমাম বাকের (আ.) বলেছেন:
تطوی له الارض و نظهر له الکنوز
ভূমি পেচিয়ে উঠবে এবং তার মধ্যে লুকাইত সকল সম্পদ প্রকাশিত হবে (কামালুদ্দিন খণ্ড- ১, বাব ৩২, হাঃ ১৬, পৃ.-৬০৩)৷
২- সম্পদের সঠিক বন্টন: পুজবাদি অর্থ ব্যবস্থার মূল সমস্যা হচেছ একটি বিশেষ গোষ্ঠির হাতে সম্পদ কুক্ষিগত হওয়া৷ সর্বদাই এমনটি ছিল যে, সমাজের এক দল প্রভাবশালী ব্যক্তিরা জনসাধারণের সম্পদকে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করত৷ ইমাম মাহ্দী (আ.) তাদের সাথে সংগ্রাম করবেন এবং জনসাধারণের সম্পদকে তাদের কাছে ফিরিয়ে দিবেন৷ এভাবে তিনি হযরত আলী (আ.)-এর ন্যায়বিচারকে সবার কাছে প্রমাণ করবেন৷
ইমাম বাকের (আ.) বলেছেন:
اذا قام قائم اهل البيت قسم بالسوية و عدل فی الرعية
রাসূল (সা.)-এর আহলে বাইতের কায়েম যখন কিয়াম করবেন সম্পদের সঠিক বন্টন করবেন এবং সবার সাথে ন্যায়ভিত্তিক আচরণ করবেন (গাইবাতে নোমানি, বাব ১৩, হাঃ ২৬, পৃ.-২৪২)৷
ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর সময়ে সাম্য ও সৌহার্দ প্রতিষ্ঠিত হবে এবং সকলেই তাদের ঐশী ও মানবিক অধিকার প্রাপ্ত হবে৷
রাসূল (সা.) বলেছেন: আমি তোমাদেরকে মাহ্দীর সুসংবাদ দান করছি৷ আমার ইম্মতে তার আগমন ঘটবে, সে সম্পদের সঠিক বন্টন করবে৷ একজন
فلا يبقی فی الارض خراب الا عمر...
পৃথিবীর কোথাও অনুন্নত কিছুই থাকবে না, সারা বিশ্ব উন্নতিতে ভরে যাবে (কামালুদ্দিন, খণ্ড- ১, বাব ৩২, হাঃ ১৬, পৃ.-৬০৩)৷
(গ)- সামাজিক কর্মসূচী: সমাজের উচছৃপখল ও দুস্কৃতিকারীদের সাথে আচরণের বিভিন্ন পদ্ধতি আছে৷ ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর ন্যায়পরায়ণ হুকুমতে
﴿كُنْتُمْ خَيْرَ أُمّةٍ أُخْرِجَتْ لِلنَاسِ تَأْمُرونَ بِالْمَعْروفِ وَ تَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنْكَرِ وَ تُؤْمِنونَ بِاللّهِ﴾
তোমরাই শ্রেষ্ঠ ইম্মত; মানবজাতির জন্য তোমাদের আবির্ভাব হয়েছে৷ তোমরা সৎকার্যের নির্দেশ দান কর, অসৎকার্যে নিষেধ কর এবং আল্লাহে বিশ্বাস কর (সূরা আলে ইমরান আয়াত নং ১১০)৷
এর মাধ্যমে আল্লাহর সকল ওয়াজিব প্রতিষ্ঠিত হবে (এই ওয়াজিব সম্পর্কে ইমাম বাকের (আ.) বলেছেন: ন্যায় কাজের আদেশ ও অন্যায় কাজের নিষেধ
ইমাম বাকের (আ.) বলেছেন:
المهدی و اصحابه يَأْمُرونَ بِالْمَعْروفِ وَ يَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنْكَرِ
মাহ্দী ও তাঁর সাহায্যকারীরা ন্যায় কাজের আদেশ ও অন্যায় কাজের নিষেধ করবেন (বিহারুল আনওয়ার খণ্ড- ৫১, পৃ.-৪৭)৷
২- ফ্যাসাদ ও চারিত্রিক অবনতীর সাথে সংগ্রাম: ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর সময়ে অন্যায় কাজের নিষেধ কেবলমাত্র মুখেই করা হবে না বরং কার্যত অন্যায়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে৷ যার ফলে সমাজে আর কোন ফ্যাসাদ ও চারিত্রিক অবনতী দেখতে পাওয়া যাবে না এবং এবং সমাজ সকল প্রকার পঙ্কিলতা থেকে পবিত্র হয়ে যাবে৷
দোয়া নুদবাতে এ সম্পর্কে বর্ণিত হয়েছে:
اين قاطع حبائل الکذب والافتراء اين طامس آثار الزيغ والاهواء
তিনি কোথায় যিনি মিথ্যা ও অপবাদকে নির্মূল করবেন? তিনি কোথায় যিনি সকল অধপতন এবং অবৈধ কামনা-বাসনাকে ধবংস করবেন (মাফাতিহ আল জিনান, দোয়া নুদবা)৷
৩- আল্লাহর বিধানের প্রয়োগ: সমাজের উচছৃপখল ও দুস্কৃতিকারীদের সাথে আচরণের বিভিন্ন পদ্ধতি আছে৷ ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর ন্যায়পরায়ণ হুকুমতে
فاذا خرج اشرقت الارض بنور ربها و وضع ميزان العدل بين الناس فلا يظلم احد احداً
তিনি যখন কিয়াম করবেন পৃথিবী আল্লাহর নুরে আলোকিত হয়ে যাবে৷ তিনি ন্যায়ের মানদণ্ডকে এমনভাবে স্থাপন করবেন যে কেউ কারো প্রতি সামান্যতম জুলুম করতে পারবে না (বিহারুল আনওয়ার খণ্ড- ৫২, পৃ.-৩২১)৷
এ রেওয়ায়াত থেকে বোঝা যায় যে, ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর ন্যায়বিচার এত বেশী ব্যাপক যে অত্যাচারীদের অত্যাচারের পথ বন্ধ হয়ে যাবে৷ এভাবে অন্যায়ের পথ সম্পূর্ণরূপে রুদ্ধ হয়ে যাবে৷
و لو قد قائمنا ... لذهبت الشحناء من قلوب العباد
যখন আমাদের কায়েম কিয়াম করবেন, সবার মন থেকে হিংসা ও বিদ্বেষ দূরিভুত হবে৷
তখন হিংসা-বিদ্বেষের আর কোন অজুহাত থাকবে না৷ কেননা, তখন সবত্র ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠত হবে এবং কারো অধিকার পয়মল হবে না, সকলেই বিবেকের সাথে চলবে, কামনা-বাসনার সাথে নয়৷ সুতরাং হিংসা-বিদ্বেষের আর কোনো পথই অবশিষ্ট থাকবে না৷ এভাবে প্রত্যেকেই আন্তরিক ও ঐক্যবদ্ধভাবে জীবন-যাপন করবে এবং কোরআনী ভ্রাতৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হবে (انماالمومنوناخوة সূরা হুজুরাত আয়াত নং ১০)৷
ইমাম জাফর সাদিক (আ.) এ সম্পর্কে বলেছেন: সে সময় আল্লাহ সবার মধ্যে ঐক্য ও আন্তরিকতা দান করবেন (কামালুদ্দিন, খণ্ড- ২, বাব ৫৫, হাঃ ৭, পৃ.-৫৪৮)৷
﴿وَ لَوْ أَنّ أَهْلَ الْقُري أَمَنوا وَ اتّقَوْا لَفَتَحْنا عَلَيْهِمْ بَرَكَتٍ مِنَ السّماءِ وَ الْأَرْضِ وَ لَكِنْ كَذّبوا فَأَخَذْنَهُمْ بِما كانوا يَكْسِبونَ﴾
যদি সেই সকল জনপদের অধিবাসীবৃন্দ ঈমান আনত ও তাকওয়া অবলম্বন করত তবে আমি তাদের জন্য আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর কল্যাণ উন্মুক্ত করতাম, কিন্তু তারা প্রত্যাখ্যান করেছিল৷ সুতরাং তাদের কৃতকর্মের জন্য তাদেরকে শাস্তি দিয়েছি সূরা আরাফ আয়াত নং ৯৬)৷
﴿هُوَ الّذي أَرْسَلَ رَسولَهُ بِالْهُدي وَ دينِ الْحَق لِيُظْهِرَهُ عَلَي الدَينِ كُله وَ لَوْ كَرِهَ الْمُشْرِكونَ﴾
মুশরিকরা অপ্রীতিকর মনে করলেও অপর সমস্ত দীনের উপর জয়যুক্ত করার জন্য তিনিই পথনির্দেশ ও সত্য দীনসহ তাঁর রাসূল প্রেরণ করেছেন (সূরা তাওবা আয়াত নং ৩৩, সূরা ফাতহ আয়ত নং ২৮, সূরা সাফ আয়াত নং ৯)৷
﴿إِنّ اللّهَ لايُخْلِفُ الْميعاذَ﴾
নিশ্চয়ই আল্লাহ ওয়াদা খেলাফ করে না (সূরা আলে ইমরান আয়াত নং ৯)৷
কিন্তু রাসূল (সা.) ও আল্লাহর ওয়ালীগণের অনেক চেষ্টার পর এখনও তা বাস্তবায়িত হয় নি (এটা একটি বাস্তব বিষয় এ সম্পর্কে মোফাস্সেরগণ যেমন: ফখরে রাজি তার তাফসিরে কাবীরের খণ্ড- ১৬, পৃ.-৪০, কুরতুবী তার তাফসীরে কুরতুবীতে খণ্ড- ৮, পৃ.-১২১ এবং তাবরাসী তার তাফসীরে মাজমাউল বায়ানে খণ্ড- ৫, পৃ.-৩৫ এসম্পর্কে আরোচনা করেছেন) প্রতিটি মুসলমান সে দিনের প্রতীক্ষায় রয়েছে৷ এ সত্যটি মাসুম ইমামদের বাণীতেও বর্ণিত হয়েছে৷
সুতরাং ইমাম মাহ্দীর হুকুমতে اشهدانلاالهالاالله ধবনি যা ইসলামের পতাকা এবং আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান রাসূলুল্লাহ গোটা বিশ্বকে পরিপূর্ণ করবে এবং র্শিক ও কুফ্রের কোন অস্তিত্ব আর থাকবে না৷
ইমাম বাকের (আ.) এই আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেছেন: ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর আবির্ভাবের পর এই আয়াতের বাস্তবায়ন ঘটবে৷
﴿وَ قَتِلوهُمْ حَتَي لاتَكونَ فِتْنَةٌ وَ يَكونَ الدَينُ كُلهُ لِلّهِ فَإِنِ انْتَهَوْا فَإِنّ اللّهَ بِما يَعْمَلونَ بَصيرٌ﴾
এবং তোমরা তাদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করতে থাক যতক্ষণ না ফিত্না দূর হয় এবং আল্লাহর দ্বীন সামগ্রিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং যদি তারা বিরত হয় তবে তারা যা করে আল্লাহ তো তার সম্যক দ্রষ্টা (সূরা আনফাল আয়াত নং ৩৯)৷
তবে ইসলামের এ বিশ্বজনীনতা ইসলামের সত্যতার জন্যই এবং ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর সময়ে তা আরও বেশী স্পষ্ট হবে ও সকলকে নিজের দিকে
আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে বলছেন:
﴿وَعَدَ اللّهُ الّذينَ أَمَنوا مِنْكُمْ وَ عَمِلُوا الصّلِحَتِ لَيَسْتَخْلِفَنّهُمْ فِي الْأَرْضِ كَمَا اسْتَخْلَفَ الّذينَ مِنْ قَبْلِهِمْ وَ لَيُمَكنَنّ لَهُمْ ذينَهُمُ الّذِي ارْتَضي لَهُمْ وَ لَيُبَدلَنّهُمْ مِنْ بَعْدِ خَوْفِهِمْ أَمْناً يَعْبُدونَني لايُشْرِكونَ بي شَيْئاً وَ مَنْ كَفَرَ بَعْدَ ذَلِكَ فَأُولَئِكَهُمُ الْفَسِقونَ﴾
তোমাদের মধ্যে যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে আল্লাহ তাদেরকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে, তিনি অবশ্যই তাদেরকে পৃথিবীতে প্রতিনিধিত্ব দান করবেন, যেমন তিনি প্রতিনিধিত্ব দান করেছিলেন তাদের পূর্ববর্তীদেরকে এবং তিনি অবশ্যই তাদের জন্য প্রতিষ্ঠিত করবেন তাদের দ্বীনকে যা তিনি তাদের জন্য পছন্দ করেছেন... (সূরা নুর আয়াত নং ৫৫)৷
ইমাম জাফর সাদিক (আ.) এই আয়াতের অর্থ সম্পর্কে বলেছেন: এই আয়াত ইমাম মাহ্দী (আ.) ও তাঁর সাহায্যকারীদের উদ্দেশ্যে নাযিল হয়েছে (গাইবাতে নোমানি হাঃ৩৫, পৃ.-২৪০)৷
القائم منا يبلغ سلطانه المشرق و المغرب و يظهر الله عزوجل به دينه علی الدين کله ولوکره المشرکون
কায়েম হচেছ রাসূল (সা.)-এর বংশ থেকে এবং তিনি প্রাচ্য ও প্রাশ্চাত্যের অধিপতি হবেন, আল্লাহ তাকে অপর সমস্ত দ্বীনের উপর জয়যুক্ত করবেন, মুশরিকরা অপ্রীতিকর মনে করলেও (কামালুদ্দিন খণ্ড- ১, বাব ২৩, হাঃ ১৬, পৃ.-৬০৩)৷
ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর হুকুমতের রাজধানী হচেছ ঐতিহাসিক কুফা শহর৷ সে সময়ে কুফার পরিধি আরও বৃদ্ধি পাবে এবং নাজাফও কুফার মধ্যে পড়বে আর সে কারণেই কিছু কিছু হাদীসে নাজাফকে ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর হুকুমতের রাজধানী হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে৷
صنع کما صنع رسول الله (ص) يهدم ما کان قبله کما هدم رسول الله (ص) امر الجاهلية و يستأنف الاسلام جديدا
ইমাম মাহ্দী (আ.) রাসূল (সা.)-এর মতই পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন৷ রাসূল (সা.) যেভাবে অজ্ঞদের সকল কুসংস্কারকে ধবংস করেছিলেন, ইমাম মাহ্দী (আ.)ও আধুনিক সকল অজ্ঞতা ও কুসংস্কারকে দূর করে ইসলামের সঠিক স্বরূপকে প্রতিষ্ঠা করবেন (গাইবাতে নোমানি বাব ১৩, হাঃ ১৩, পৃ.-২৩৬)৷
৪) - ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর যুদ্ধ পদ্ধতি
علامة المهدی ان يکون شديدا علی العمال جوادا بالمال رحيما بالمساکين
ইমাম মাহদীর চিহ্ন হচেছ কর্মচারিদের কাজে কড়া নজর রাখবেন৷ অধিক দান-খয়রাত করবেন এবং মিসকিনদের প্রতি অতি দয়ালূ হবেন (মোজামে আহাদীসে আল ইমাম আল মাহদী, খণ্ড- ১, হাঃ ১৫২, পৃ.-২৪৬)৷
৭) - ইমাম মাহদী (আ.)-এর অর্থনৈতিক পদ্ধতি
অর্থ বিভাগে ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর পদ্ধতি হচেছ সাম্য অর্থাৎ সবার মাঝে সমানভাবে অর্থ বন্টন করা৷ যে নীতি রাসূল (সা.) নিজেও অবলম্বন করতেন৷
اذا قام قائمنا اضمحلت القطائع فلاقطائع
আমাদের কায়েম যখন কিয়াম করবে তখন অত্যাচারি শাসকরা যে সকল সম্পত্তি অবৈধভাবে দখল করেছিল বা আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধুবান্ধবদের মধ্যে বন্টন করেছিল তা ফিরিয়ে নেওয়া হবে এবং তাদের নিকট আর কোন সম্পত্তি থাকবে না (বিহারুল আনওয়ার খণ্ড- ৫২, পৃ.-৩০৯)৷
ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর অর্থনৈতিক ব্যবস্থার আর একটি বৈশিষ্ট্য হচেছ সকল মানুষের সমস্যার সমাধান করা এবং তাদের জন্য একটি সচছল জীবন গঠন করা৷ ইমাম মাহ্দী (আ.) প্রচুর সম্পদ মানুষকে দান করবেন এবং নির্ভরশীল ব্যক্তিরা সাহায্য চাইলে তাদেরকে সাহায্য করবেন৷
রাসূল (সা.) বলেছেন:
فهو يحثوا المال حثوا
সে অধিক সম্পদ দান-খয়রাত করবে (বিহারুল আনওয়ার খণ্ড- ৫২, পৃ.-৩০৯)৷
এ পদ্ধতিতে ব্যক্তি ও সমাজকে সংশোধন করা সম্ভব যেটা ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর মহান উদ্দেশ্য৷ তিনি জনগণকে অর্থনৈতিকভাবে স্বনির্ভর করার মাধ্যমে মানুষের ইবাদত-বন্দেগির পথকে সুগম করবেন৷
৮) - ইমাম মাহদী (আ.)-এর ব্যক্তিগত আদর্শ
ان قائمنا اذا قام لبس لباس علی و سار بسيرته
আমাদের কায়েম যখন কিয়াম করবেন হযরত আলী (আ.)-এর পোশাক পরিধান করবেন এবং তার পদ্ধতিতেই দেশ পরিচালনা করবেন (ওছয়েলুশ শিয়া খণ্ড- ৩, পৃ.-৩৪৮)৷
তিনি নিজে কষ্টে জীবন-যাপন করবেন কিন্তু উম্মতের সাথে একজন দয়ালু পিতার ন্যায় আচরণ করবেন৷ তাদের কল্যাণ ও সৌভাগ্য কামনা করবেন, ইমাম রেযা (আ.) বলেছেন:
الامام الانيس الرفيق والوالد الشفيق والاخ الشقيق والام البرة بالئلد الصغير مفزع العباد فی الداهية الناد
ইমাম, সহধর্মি, সহপাটি, দয়ালু পিতা, আপন ভাই, সন্তানদের প্রতি মমতাময়ী মাতা এবং কঠিন মুহুর্তে মানুষের আশ্রয়স্থল (উছুলে কাফী খণ্ড- ১, হাঃ ১, পৃ.-২২৫)৷
হ্যাঁ তিনি সবার সাথে এত ঘনিষ্ট ও এত বেশী নিকটবর্তী যে, সকলেই তাঁকে নিজেদের আশ্রয়স্থল মনে করবে৷
রাসূল (সা.) ইমাম মাহ্দী (আ.) সম্পর্কে বলেছেন: তাঁর উম্মত তাঁর কাছে আশ্রয় নিবে যেভাবে মৌমাছিরা রানী মাছির কাছে আশ্রয় নেয় (মুনতাখাবুল আছার অধ্যায় ৭, বাব ৭, হাঃ ২, পৃ.-৫৯৭)৷
انا بقية الله فی ارضه والمنتقم من اعدائه ...
আমিই হলাম পৃথিবীতে আল্লাহর শেষ গচিছত সম্পদ এবং আমি আল্লাহর দুশমনদের থেকে প্রতিশোধ গ্রহণ করব৷ হে আহমাদ বিন ইসহাক নিজ চোখে দেখার পর আর কোন চিহ্নের অপেক্ষায় থেক না৷
আহমাদ বিন ইসহাক বলেন: এ কথা শোনার পর অতি আনন্দের সাথে ইমাম (আ.)-এর বাড়ী থেকে চলে আসলাম (কামালুদ্দিন খণ্ড- ২, বাব ৩৮, হাদীস ১, পৃ.-৮০)৷
অনুরূপভাবে মুহাম্মদ বিন উসমান ও আরও কয়েক জন বিশিষ্ট শিয়া ব্যক্তিত্ব বর্ণনা করেছেন:
https://hadithbn.wordpress.com/http://www.ahlebait.in/index.php?option=com_content&view=section&id=31&Itemid=57http://bn.abna24.com/cultural/mahdi/archive/0000/00/00/183965/story.htmlhttp://portal.tebyan.net/Portal/Cultcure/Punjabi/Site/www.islamshia-wcom/CategoryID/9262/71166.aspxhttp://portal.tebyan.net/Portal/Cultcure/Punjabi/Site/www.islamshia-wcom/CategoryID/9262/CaseID/41589/71243.aspx